রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

গাজীপুরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ভাগ্নিকে হত্যার দায়ে  মামার ফাঁসি ও দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

 

গাজীপুর সংবাদদাতা : গাজীপুরের শ্রীপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে শিশু ভাগ্নিকে গলাকেটে হত্যার দায়ে তার মামাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- এবং অপর দুই জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপর দুই আসামীর প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম করাদ- দেয়া হয়েছে। গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কে এম এনামুল হক বুধবার সকালে এ রায় প্রদান করেন।  এদের মধ্যে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামী হলো-গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার চকপাড়া এলাকার হাসমত আলীর ছেলে মো. রিপন মিয়া (৩৩) এবং যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্তরা হলো বগুড়া জেলা সদরের ভাটকান্দি গ্রামের মো. রহিমের ছেলে রবিউল ইসলাম (২০) এবং শেরপুর ঝিনাইগাতী থানার দিঘীরপাড় এলাকার মো. মোস্তফার ছেলে মো. মোজাফ্ফর (১৯)। রায় ঘোষণার সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিল।

গাজীপুর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট হারিছ উদ্দিন আহমেদ ও কোর্ট ইন্সপেক্টর রবিউল ইসলাম জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ছলিং মোড় (চক পাড়া) এলাকার হাসমত আলীর মেয়ে দুই সন্তানের জননী আছমা বেগমের সঙ্গে প্রথম স্বামী আক্কাছ আলীর বিচ্ছেদ হয়। পরে আছমা একই গ্রামের জামাল উদ্দিনকে বিয়ে করে স্বামীর বাড়িতে থাকেন। আছমার প্রথম সংসারের মেয়ে নাজমিন (৭) তার নানার বাড়িতে থাকতো। হাসমত আলীর সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে জমি নিয়ে প্রতিবেশী আব্দুল করিম, আব্দুল কাদির, আব্দুল মোতালেবদের বিরোধ চলছিল। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এবং প্রতিবেশী করিমের বাড়ি দখলের পরিকল্পনা করে হাসমত আলীর ছেলে রিপন (৩৩)। গত ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর হাসমত আলী তার স্ত্রী ও নাতনীকে বাড়ি রেখে টাঙ্গাইলে বেড়াতে যান। এ সুযোগে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রিপন ও তার সহযোগিরা ৩০ অক্টোবর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নানির সঙ্গে ঘুমিয়ে থাকা ৭ বছরের শিশু নাজমিনকে বিছানা থেকে তুলে বাড়ির উঠোনে নিয়ে যায়। পরে নাজমিনকে গলা কেটে হত্যা করে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন সকালে নিহতের মা আসমা বেগম বাদী হয়ে প্রতিবেশী আব্দুল করিম (৩২), আব্দুল কাদির (৩৮) ও আব্দুল মোতালেবকে (৪২) আসামী করে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর মডেল থানার এসআই খন্দকার আমিনুর রহমান তথ্য প্রমাণ ও স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি আসামী নিহতের মামা রিপন এবং স্থানীয় রবিউল ও মোজাফ্ফরের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় মামলায় উল্লেখিত আব্দুল করিম (৩২), আব্দুল কাদির (৩৮) ও আব্দুল মোতালেব (৪২) চার্জশিট থেকে বাদ পড়েন। 

এমামলায় ৮ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ এবং দীর্ঘ শুনানি ও যুক্তিতর্ক শেষে বুধবার আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামীরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিল। 

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন গাজীপুর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট হারিছ উদ্দিন আহমেদ এবং আসামী পক্ষে ছিলেন শাহ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ও ওয়াহিদুজ্জামান আকন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ